গণিত শাস্ত্রে জ্যামিতি একটা গুরুত্বপুর্ণ
অধ্যায়। জ্যামিতি মূলত দু প্রকার। যেটা আমরা মাধ্যমিকের আগে পড়ি সেটাকে বলে
ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি। ইউক্লিড্ কিছু সিদ্ধান্তকে বিনা প্রমান মেনে নিয়েছেন।
যেগুলোকে বলে স্বতঃসিদ্ধ। আর কিছু সূত্র প্রমান করেছেন ওই স্বতঃসিদ্ধ ধরে।
যেগুলোকে বলাহয় উপপাদ্য। আর এই উপপাদ্য আর স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে যা প্রমান করতে হয়
সেগুলোকে চলতি কোথায় বলাহয় এক্সট্রা। সাহিত্য আর সমাজের সম্পর্ক অনেকটা এই
উপপাদ্যের মতো। সাহিত্য সমাজের প্রতিফলন। এটা যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে যুক্তি দিয়ে
প্রমানও করা যায় যে সাহিত্য সমাজের প্রতিফলন। অনেকটা ওই উপপাদ্য প্রমানের মতো। খুব
সংক্ষেপে প্রমান টা হলো - সাহিত্যের তাৎপর্য আর সমাজের সংজ্ঞা - এই দুই সমীকরণের
সমাধান। সাহিত্যের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে রস নিস্পত্তির মধ্যে। রস হলো একটা রাসায়নিক
বিক্রিয়ার প্রোডাক্ট। যেখানে বাইরের সমাজ আর মনের ভাব এই দুই উপাদান বিক্রিয়া করে
রস সৃষ্টি করে। সমাজের আলম্বন হলো বিক্রিয়ার অনুঘটক। তাই শুরুতেই আমরা সিদ্ধান্ত
নিলাম যে সাহিত্য সমাজের প্রতিফলন। বিষয়টা অনেকটা বিজ্ঞানের মতোই যুক্তিগ্রাহ্য।
রবীন্দ্রনাথকে জানতে গেলে ক্রনোলজি আর হিস্ট্রি এই দুটো বিষয় মাথায় রাখতে হয়।
রবীন্দ্রনাথের মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র) ছিলেন ভারতের প্রথম আই সি এস অফিসার।
রবীন্দ্রনাথ ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে অথবা আই সি এস হওয়ার জন্য
ইংল্যান্ডে যান। সেখানে ব্রিটিশ সংস্কৃতি বিশেষ করে মহিলাদের স্বাধীনতা ওনাকে
আকৃষ্ট করে। রবীন্দ্রনাথের বৌঠান কাদম্বরী দেবী হয়তো এই বিষয়ে কোনো তির্যক
ব্যঙ্গোক্তি করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লেখেন -
তোমারেই
করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা, এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা।
গানটি
ব্রাহ্ম সংগীত হিসেবেও গাওয়া হতো। গীতবিতান এটিকে ব্রাহ্ম সংগীত হিসেবে দেখিয়েছে।
কথিত আছে স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণদেবকে এই গানটি শুনিয়েছিলেন।
বিদেশে থাকাকালীন কবি ১৩ টি পত্র লেখেন যেগুলো
ছিন্ন পত্রাবলিতে সংযোজিত। এই পত্রগুলি ভারতী পত্রিকায় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের
মন্তব্য সহ প্রকাশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের বিবাহের পাঁচ মাসের পর ১৯৮৪ সালে
কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু হয়। কাদম্বরী দেবী আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করেন। রবীন্দ্রনাথ
আর কাদম্বরী দেবীর সম্বন্ধে অনেক মুখরোচক গল্প থাকলেও এই প্রেম কে বুঝতে গেলে
ব্রজবুলি ভাষায় রচিত ভানুসিংহের পদাবলী জানতে হয়। এখানে রাধা কৃষ্ণের প্রেমের
রূপকে আসলে রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে।
ভানুসিংহ
ঠাকুরের পদাবলী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রজবুলি ভাষায় রচিত একটি
কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ কৈশোর ও প্রথম যৌবনে "ভানুসিংহ"
ছদ্মনামে বৈষ্ণব কবিদের অনুকরণে
কিছু পদ রচনা করেছিলেন। ১৮৮৪
সালে সেই কবিতাগুলিই ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী নামে প্রকাশিত হয়।
কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত
হয়েছিল। (সূত্র: উইকিপেডিয়া)আদি গ্রন্থের উৎসর্গ তে আছে - ভানুসিংহের
কবিতাগুলি ছাপাইতে তুমি আমাকে অনেকবার অনুরোধ করিয়াছিলে। তখন সে অনুরোধ পালন করি
নাই। আজ ছাপাইয়াছি, আজ তুমি আর দেখিতে পাইলে না!ভানুসিংহের পদাবলী যে আঙ্গিকে
লেখা হয়েছে সেটা বিচার করতে গেলে বুঝতে হবে রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরী দেবীর
সম্পর্ককে। বৈষ্ণব সাহিত্যে রাধা কৃষ্ণের
যে সমীকরণ সেই বিভাব আলম্বনের মধ্যে দিয়ে,
কবি, কাদম্বরী দেবীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান সবকিছু প্রকাশ করেছেন। এই সম্পর্ক ভালো করে বুঝতে গেলে
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর 'মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান' কবিতাটি বিশ্লেষণ করা
প্রয়োজন।
মরণরে,
তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান! / মেঘ বরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট, / রক্ত কমল কর, রক্ত অধর-পুট, / তাপ-বিমোচন কৰুণ কোর তব,
মৃত্যু অমৃত করে দান! / তুহু মম শ্যাম সমান।
তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান! / মেঘ বরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট, / রক্ত কমল কর, রক্ত অধর-পুট, / তাপ-বিমোচন কৰুণ কোর তব,
মৃত্যু অমৃত করে দান! / তুহু মম শ্যাম সমান।
এখানে রাধা
বলছেন মরণ তুমি আমার শ্যামের সমান। এখানে ব্যাকরণের প্রাথমিক সূত্র - বাক্যে কর্তা
(Subject) আর কর্ম (Object) এই দুই মূল উপাদানের সম্পর্ক বা পার্থক্য প্রণিধান
যোগ্য। কথাতেই আছে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।
কর্তা মুখ্য বা প্রধান। ইংলিশ
গ্রামারে অবজেক্ট কে প্রধান করতে হলে
প্যাসিভ ভয়েস ব্যবহার করতে হয়। subject আর
object সূত্র ধরে কবি বলছেন যে, রাধা মনে করছেন মরণ বড়ো, তাই মরণ সাবজেক্ট। রাধা
মরণকে শ্যামের সমান মনে করছেন। শ্যাম অবজেক্ট। রাধা মনে করছেন মৃত্যু হলে যেন তিনি
শ্যামের সাথে মিলতে পারবেন। মৃত্যু প্রধান, শ্যাম তারপর|
কবিতার শেষে
আছে:
ভানু সিংহ কহে, “ছিয়ে ছিয়ে রাধা / চঞ্চল হৃদয়
তোহারি, / মাধব পহু মম, প্রিয় স মরণসে / অব তুঁহুঁ দেখ বিচারি!”
ভানুসিংহ অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ
বলছেন যে রাধা তোমার হৃদয় চঞ্চল। তুমি মৃত্যু কে প্রধান ভাবছো। শ্যাম আগে তারপর
মৃত্যু। এবার রাধা তুমি বিচার করো। শ্যাম আগে না মরণ আগে।
এই subject - object সূত্র বৈষ্ণব পদাবলীতে
আগেও প্রয়োগ করা হয়েছে। কৃষ্ণস্তূ ভগবান
স্বয়ম। এখানে কৃষ্ণ প্রধান কারণ সাবজেক্ট।
ভানুসিংদের পদাবলীতে রাধা মরণকে প্রধান ভাবছেন।
ভানুসিংহ বলছেন রাধা তুমি বিচার করো কে বড়ো শ্যাম না মরণ। রাধার জায়গায় কাদম্বরী দেবী আর কৃষ্ণের
জায়গায় ভানুসিংহ অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথকে
বসলে কবিতার মূল ভাবনাটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
দুর্ভাগ্যবসত অধিকাংশ সমালোচকই
কাদম্বরী দেবীর সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ককে বুঝতে পারেননি। প্রফেসর জগদীশ ভট্টাচার্যের কবি মানসী গ্রন্থে
এই বিষয়ে এনালাইসিসও আছে। কাদম্বরী দেবী রাধা আর শ্যাম হলো রবীন্দ্রনাথ। রাধা কৃষ্ণের সম্পর্কের মতোই সমীকরণ। তাই বৈষ্ণব পদাবলীর পটভূমিতে 'মরণ রে, তুঁহু মম
শ্যাম সমান' কবিতায় এই সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ
ছদ্মনাম নিয়েছিলেন বানীবিনোদ বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ হলেও
আদিতে ছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি নিজেকে সবসময় বাণী দিয়ে বিনোদনকারী হিসেবে
ভেবেছেন। কবি নিজে সরাসরি রাজনীতি না করলেও রাজনৈতিক চেতনার সাথে যুক্ত ছিলেন। ভারতীয়
রাজনীতিতে ১৯৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হয়। কংগ্রেসের রাজনীতি দেখে উনি
অনুভব করলেন, ব্রিটিশের কাছে আবেদন নিবেদন করে কোনো লাভ হবেনা। উনি বললেন
ভিক্ষায়াং নৈব নৈব চ।1986 সালে গানের মধ্যে দিয়ে উনি বললেন –
কেন চেয়ে আছ, গো মা, মুখপানে ।
এরা চাহে না তোমারে চাহে না যে, আপন মায়েরে নাহি জানে।
এরা তোমায় কিছু দেবে না, দেবে না— মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভাণে।।
তুমি তো দিতেছ, মা, যা আছে তোমারি— স্বর্ণশস্য তব, জাহ্নবীবারি,
জ্ঞান ধর্ম কত পুণ্যকাহিনী।
এরা কী দেবে তোরে! কিছু না, কিছু না। মিথ্যা কবে শুধু হীনপরানে।।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে জমিদারি দেখার
জন্য উনি ১৮৮৯ থেকে ১৮৯১ এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ, বাংলাদেশের শিলাইদহ ভ্রমণ করেন এবং
দ্বিতীয়বার বিদেশ যাত্রাও করেন। এই সময়
তাঁর নজরে আসে পল্লীগ্রামের মানুষের দারিদ্র্য আর দুরবস্থা। সেই সাথে বাংলার গ্রাম আর বিদেশের গ্রামের
মধ্যে পার্থক্য তিনি অনুধাবন করেন। রামপুর বোয়ালিয়া তে ২৩ ফাল্গুন, ১৩০০ (১৮৯৪) সালে তিনি লিখলেন
'এবার ফিরাও মোর'। চিত্রা কাব্যগ্রন্থের এই কবিতা
রবীন্দ্রনাথের সমাজ চিন্তার এক মাইলস্টোন।
সেইসময় ১৮৯৩ সালে আর এক ভারতীয় স্বামী বিবেকানন্দ চিকাগো মহাসভায় বিশ্ব জয় করেন।
'এবার ফিরাও মোর' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখলেন -
"কার শঙ্খ উঠিয়াছে বাজি
জাগাতে জগৎ-জনে?"
"ওই যে দাঁড়ায়ে নতশির
মূক সবে-- ম্লান মুখে লেখা শুধু শত
শতাব্দীর
বেদনার করুণ কাহিনী;"
"এই-সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে
দিতে হবে ভাষা-- এই-সব শ্রান্ত
শুষ্ক ভগ্ন বুকে
ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা-,"
“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু,
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু,”
“নির্ভয়ে ছুটিতে হবে, সত্যেরে
করিয়া ধ্রুবতারা।
মৃত্যুরে করি না শঙ্কা। দুর্দিনের
অশ্রুজলধারা
মস্তকে পড়িবে ঝরি-|”
সত্যকে
ধ্রুবতারা করে চলার পথে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে কবি লিখলেন -
যদি
তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে
একলা চলো রে। ……..
দাদরা তালে বাউলাঙ্গের এই গান
অতুলচন্দ্র গুপ্তের ‘কাব্য জিজ্ঞাসা’র ভাষায় বীর রসের গান। তবে ১৯০৪ সালে কবির
স্বদেশ ভাবনার অনুকরনে মনেহয় কবি বলতে চেয়েছেন আগে গ্রাম গঠন করতে হবে। তিনি নিজে
শান্তিনিকেতনে আদর্শ গ্রাম গঠনের পরিকল্পনা করেন। গ্রামের উন্নয়নই কবির সমাজ
চিন্তার উন্মেষ। গ্রাম গঠনের স্বপ্ন নিয়ে কবি ১৯১০ সালে লিখলেন -
আমরা
সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে--
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী
স্বত্বে?।...
ইমন আর ভূপালী রাগের মিশ্রনে
দাদরা তালে স্বদেশ পর্যায়ের এই গানে কবি বলছেন কেউ ছোট বা বড়ো নয় সবাই সমান, কেউ
ব্রিটিশ শাসনে বদ্ধ নয় - "নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে"।
আমরা সবাই সমান, সমান মান, সবাই রাজা।
এরপর কবি অনুভব করলেন শুধু কৃষি
নয় শিল্পেও উন্নতি করতে হবে। ১৯১১ সালে কবির লেখায় বার বার তাই কৃষি আর শিল্প উঠে
এসেছে।
কৃষি নিয়ে লিখলেন - আমরা চাষ করি
আনন্দে
শিল্প নিয়ে লিখলেন - কঠিন
লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন, ও তার ঘুম ভাঙাইনু রে।
লক্ষ যুগের অন্ধকারে ছিল সঙ্গোপন,
ওগো, তায় জাগাইনু রে॥
নোবেল
পুরস্কার পাওয়ার সময় ইউরোপ ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে কবি পরিচিত হলেন আধুনিক বিজ্ঞানের
সাথে। আইনস্টাইন, ডারউইন এনাদের তত্ত্ব কবি ভাবলেন। এই বিজ্ঞান চেতনা কবির লেখায়
বহুবার এসেছে।
অন্ধকারের
উৎস হতে উৎসারিত আলো। সেইতো তোমার আলো।
এখানে আলোক বিজ্ঞানের তত্ত্ব
প্রয়োগ করা হয়েছে। উৎস কথার প্রচলিত অর্থ origin | উৎস শব্দের মূল অর্থ ঝর্ণা।
রবীন্দ্রনাথ এই ঝর্ণা কথার পরিবর্তে উৎস কথাটি ব্যবহার করেছেন। আলো একপ্রকার
শক্তি। যা নিজে অদৃশ্য। আলো কোনো পদার্থের ওপর পড়লে সেই পদার্থ আলোকিত হয়। এই
তত্ত্ব কবিতায় প্রয়োগ করলে দাঁড়ায় যে আলো নিজে অন্ধকারের ঝর্ণা কারণ আলো একপ্রকার
তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। শুধু যখন আলো কোনো পদার্থের ওপর পড়ে আমরা আলো দেখতে পাই। যেমন
আমরা বলি ঘর আলো হয়ে গেলো।
ওগো নদী, আপন
বেগে পাগল-পারা,
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা॥
আমি সদা অচল
থাকি, গভীর চলা গোপন রাখি, আমার চলা নবীন পাতায়, আমার চলা ফুলের
ধারা॥
এখানে গভীর চলা গোপন রাখি -এই
লাইনটি বিশেষ প্রণিধান যোগ্য। এখানে নদী হলো আসলে জীবন। জীবন আপন বেগে বয়ে চলে।
চাঁপার তরু উপমান। যা সুগন্ধ দেয়। জীবন বয়ে চলে। শুধু সময়ের সাথে বিবর্তন হয়
জীবনের। বিবর্তন বাদ নিয়ে আধুনিক গবেষণা হলো লামার্ক বা ডারউইন বাদ। যেখানে বলা হয়
বিবর্তন থেমে থাকে না। চলতেই থেকে। গভীর ভাবে। তাই ফুলের ধারা কথাটি সেই বিবর্তনের
ধারাকে বোঝায়।
‘বলাকা’ ১৯১৬
সালে রচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ। বাংলাপিডিয়া অনুযায়ী বলাকা কাব্যে মোট ৪৫টি কবিতা রয়েছে; ১০টি
সমপঙক্তিক আর ১টি সনেট আকারবদ্ধ। অবশিষ্ট ৩৪টি বিষম ছন্দে রচিত এবং উক্ত ৩৪টি
কবিতার ছন্দকেই ‘বলাকার ছন্দ’ বলা হয়। কাব্যটিতে কবি যেসব বিষয়গুলো তুলে
ধরেছেন-ক. নিসর্গ প্রকৃতি ও বিশ্ব প্রকৃতি এ দুটি রূপকে কবির প্রকৃতিচেতনা প্রকাশিত
হয়েছে, খ. ‘চঞ্চলা’ ও ‘বলাকা’ কবিতা দুটিতে কবির বিশ্ব প্রকৃতিগত গতিচেতনার
পরিচয় রয়েছে আর কবির নিসর্গ-প্রকৃতি তাঁর বিপ্লব চেতনার পরিপোষকরূপে রয়েছে
ঝড়ের খেয়া কবিতা, গ. ৪১ ও ২৬ সংখ্যক কবিতা দুটি খাঁটি নিসর্গ চিত্রের কবিতা;
এরমধ্যে ২৬ সংখ্যকটি প্রধান, ঘ. অন্যকোনো ভাবের অনুষঙ্গরূপে বা গতিচেতনা বা
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানিক বিশ্বচেতনার অভিব্যক্তিরূপে এ কাব্যে কবি প্রকৃতিকে
অবিমিশ্র নিসর্গ প্রকৃতিরূপে সামান্যই অনুভব করেছেন।
প্রচলিত সমালোচনাতে কিছুটা জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানিক
বিশ্বচেতনার কথা বলা হলেও, অধিকাংশ সমালোচক খুব পরিষ্কার ভাবে বিষয়টি প্রকাশ
করেননি। বলাকাতে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রয়োগ আলোচনা করা যেতে পারে। একটু গভীর ভাবে
বিচার করলে বলাকা কাব্য গ্রন্থে ডারউইন এর বিবর্তনবাদ আর আইনস্টাইনের অপেক্ষবাদ
তত্ত্ব ফুটে উঠেছে।
হে বিরাট নদী,
অদৃশ্য নিঃশব্দ
তব জল
অবিচ্ছিন্ন
অবিরল
চলে নিরবধি।
স্পন্দনে শিহরে
শূন্য তব রুদ্র কায়াহীন বেগে;
বস্ত্তহীন
প্রবাহের প্রচন্ড আঘাত লেগে
পুঞ্জ পুঞ্জ
বস্ত্তফেনা উঠে জেগে;
আলোকের
তীব্রচ্ছটা বিচ্ছুরিয়া উঠে বর্ণস্রোতে
ধাবমান অন্ধকার
হতে;
এখানে বস্তুহীন প্রবাহ হলো গতিশক্তি
যা আইনস্টাইনের সূত্রে হয়ে যায় পুঞ্জ
পুঞ্জ বস্ত্তফেনা। বিরাট নদী
হলো জীবনের প্রতীক। চলে নিরবধি -
বিবর্তন বাদ। আলোকের বিচ্ছুরণ বর্ণালীতে ভেঙে যায়|
E =
mc 2, equation in
German-born physicist Albert Einstein's theory of special relativity that shows
that the increased relativistic mass (m) of a body comes from the energy of
motion of the body—that is, its kinetic energy (E)—divided by the speed
of light squared (c 2).
(Source: Wikipedia)[বস্ত্তহীন
প্রবাহের প্রচন্ড আঘাত লেগে পুঞ্জ পুঞ্জ বস্ত্তফেনা উঠে জেগে;]
কারিগরি ও প্রযুক্তিতে দেশবাসীর
আকর্ষণ টানতে তিনি ১৯২২ সালে (বঙ্গাব্দ): ৩০ পৌষ, ১৩২৮ লিখলেন -
নমো যন্ত্র, নমো-- যন্ত্র, নমো-- যন্ত্র, নমো--
যন্ত্র!
তুমি চক্রমুখরমন্দ্রিত, তুমি
বজ্রবহ্নিবন্দিত,
তব বস্তুবিশ্ববক্ষোদংশ ধ্বংসবিকট দন্ত ॥
রবীন্দ্রনাথ
নিয়ে গবেষণা আজও হয়ে চলেছে। রবীন্দ্রনাথকে আধুনিক আলোকে বুঝতে গেলে, উপনিষদ আর
আধুনিক বিজ্ঞান এই দুই মেরুকে জানতে হবে। উপনিষদে
আকাশ শব্দটার একটা বিশেষ অর্থ আছে। (আকাশ আনন্দ নস্যাৎ) ক্ষিতি, অপ, তেজ,
মরুৎ, ব্যোম (আকাশ)- এই পাঁচ উপাদানের সমন্বয় হলো আমাদের এই পৃথিবী। এই পঞ্চ
উপাদানের সাথে আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় বিশেষ
ভাবে যুক্ত। চোখ, কান, নাক, জিভ, ত্বক -
দর্শন শ্রবণ গন্ধ স্বাদ আর স্পর্শ। এই পাঁচটি
সংৰেদনশীলতা আবার পাঁচ উপাদানের সাথে যুক্ত। সেই সূত্র ধরে ব্যোম বা আকাশের সাথে যুক্ত হলো
শব্দ। আকাশ পথে শব্দ সঞ্চার হয়। শব্দ না
থাকলে আনন্দ থাকতো না। তাই বলা হয় - আকাশঃ
আনন্দ নস্যাৎ অর্থাৎ আকাশ (শব্দ) না থাকলে আনন্দ থাকতো না। রবীন্দ্রনাথ এই আকাশ শব্দটি অনেক জায়গায় শব্দ
(sound) বোঝাতে ব্যবহার করেছেন। যেমন -
“আকাশ,
এস এস, ডাকিছ বুঝি ভাই, গেছিতো তোরি বুকে
আমিতো হেথা নাই|”
অর্থাৎ কবি শব্দের রাজ্যে হারিয়ে
গেছেন। অন্য ভাবে বললে কবি কাব্যের মধ্যে দিয়ে একাত্ম হয়ে গেছেন।
আমার মুক্তি
আলোয় আলোয় এই আকাশে,
আমার
মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে ॥
মিশ্র
কেদারা রাগের ওপর তেওরা তালে জার্মানিতে কবির লেখা এই গানটিতে আকাশ হলো -সাহিত্য
(শব্দ) আর আলো হলো বর্তমান কাল।
"আকাশ
ভরা সূর্য তারা" গানটি ১৯২৪ সালে লেখা। এখানে কবি বলেছেন -
“অসীম কালের যে
হিল্লোলে জোয়ার-ভাঁটার ভুবন দোলে
নাড়ীতে মোর
রক্তধারায় লেগেছে তার টান,”
আমাদের
পাঁচটা ইন্দ্রিয়, রূপ রং গন্ধ বর্ণ স্পর্শ এই অনুভূতি গুলোকে জাগিয়ে তোলে। আমাদের
অনুভূতি আর বিজ্ঞানের জড়, চেতনার সাথে অচেতনের সংযোগ ঘটে।
রবীন্দ্রনাথের
সৃজনে মননে সবসময় কাদম্বরী দেবী ফিরে ফিরে এসেছেন। ১৯০০ সালে কবি লিখলেন নববর্ষা
কবিতাটি - “হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচেরে|” নববর্ষা কবিতাটি শিলাইদহ
তে, বাংলা ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৭ সালে কবি লিখেছিলেন। ক্ষণিকা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত
কবিতাটি সাধারণত প্রকৃতির কবিতা বলে মনে হলেও কবিতাটি মূলত প্রেমের কবিতা।
কবিতাটির সম্পর্কে ডক্টর তিনকড়ি ভট্টাচার্যের বিশ্লেষণ পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা
পর্ষদের পর্ষদ বার্তায় প্রকাশিত হয়েছিল। নববর্ষ কবিতার প্রেক্ষাপট হলো চন্দননগরে
মোরান সাহেববের বাগানবাড়িতে দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর আর কাদম্বরী দেবীর সাথে
কবির কিছুকাল বসবাস। কবিতায় ব্যঞ্জনা
বুঝতে গেলে নিচের লাইনগুলো পর্যালোচনা
করতে হবে।
ওগো,
নবঘন নীলবাসখানি
বুকের
উপর কে লয়েছে টানি?
অথবা
ওগো,
নির্জনে বকুল শাখায়
দোলায়
কে আজি দুলিছে,দোদুল দুলিছে?
কবিতাটি বর্ষার আঙ্গিকে প্রেমের কবিতা।
পড়লে মনেহয় প্রকৃতির বর্ণনা। আসলে
বর্ণনার আড়ালে প্রেমের কবিতা। ইউরোপীয় সাহিত্যে ১৭৯৮ থেকে ১৮৩২ রোম্যান্টিক
মুভমেন্ট যখন হয় তখন ওয়ার্সওয়ার্থ শেলী, এনারা এক নতুন আঙ্গিকে সাহিত্য লিখতে শুরু
করেন। spring has come তখন পরিবর্তিত হয়ে যায় spring is come । সাহিত্য বিচারে
পার্থক্যটি হলো - প্রথম বাক্যে বলা হচ্ছে বসন্ত এসে গেছে। (present perfect tense)
পরের বাক্যে বলা হচ্ছে প্রকৃতির বৈশিষ্ট দেখে মনে
হচ্ছে যেন বসন্ত আসছে ( simple present tense) where come is adjective and
qualifying to noun spring | নববর্ষা
কবিতাটাও তাই নব - বর্ষা। বর্ষার বর্ণনা,
ভাব রতি, প্রেমের কথা প্রকাশ করছে।
১৯২৪
খ্রিস্টাব্দে পেরু এবং মেক্সিকো ভ্রমণের পথে অসুস্থ হয়ে
পড়লে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর্জেন্টিনায় যাত্রা বিরতি করেন এবং সান
ইসিদ্রোতে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন। ওকাম্পোর এই
বাড়ীতে প্রায় ২ মাস ছিলেন ঠাকুর এবং ৩০টি কবিতা রচনা করেন এ সময়। ঠাকুর তাঁকে
"বিজয়া বলে সম্বোধন করতেন, এবং ১৯২৫
খ্রিস্টাব্দে পূরবী কাব্যগ্রন্থটি তাঁকে উৎসর্গ করেন। (সূত্র:
উইকিপেডিয়া)কবি লিখলেন - যৌবন সরসী নীড়ে মিলন শতদল| শত ব্যস্ততা, আতিথেয়তার মাঝেও
কবির মনে বৌঠান কাদম্বরী দেবী ছিলেন কোহিনুর হয়ে।
কবির হৃদয়ে কাদম্বরী দেবী থেকে গেছে স্মৃতি থেকে অনুভূতি লোকে। তাই ১৯২৭ সালে ব্যাংকক থেকে পিনাং যাওয়ার পথে
কাহারবা তালে পিলু রাগের ওপর কবি লিখলেন -
সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা।
সেই
স্মৃতিটুকু কভু খনে খনে যেন জাগে মনে,
ভুলো না ॥
গানটা শাপমোচন নাটকের অন্তর্গত।
শাপমোচন নাটকের প্রেক্ষাপট প্রেম আর বিরহ আবার মিলন। রবীন্দ্রনাথ দাম্পত্য
প্রেমের ওপর লিখেছেন ঘরে বাইরে। আর
প্রেমিক প্রেমিকার মিলনের ওপর লিখেছেন শেষের কবিতা। প্রেমে, নায়ক বা নায়কের যখন বিচ্ছেদ হয় তখন সেই
বিরহ থেকে দুই প্রকার রস নিঃসৃত হয়। যদি
সেই বিরহ স্থায়ী হয় তবে করুন রস। আর যদি সাময়িক হয় তবে করুন বিপ্রলম্ভ রস। ঘরে বাইরে দাম্পত্য প্রেমের উপন্যাস। এই উপন্যাসে নায়কের মাথায় আঘাত লেগেছিলো। নায়ক
মারা গেছেন এটা লেখক পরিষ্কার বলেননি। তাই
ঘরে বাইরে করুন বিপ্রলম্ভ রসের কাব্য। করুন
রসের নয়। তাই সত্যজিৎ রায়ের ঘরেবাইরে
সিনেমায় করুন রস ফুটে উঠলেও কাব্যিক আঙ্গিকে এটি করুন বিপ্রলম্ভ রস। এখানে নায়কের ফিরে আসার প্রত্যাশা নায়িকার জেগে
থাকে।
রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা আর গানের মধ্যে
দিয়ে কবি সাহিত্যের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। কবির কিছু গানের সাথে পাশ্চাত্য
কবিদের লেখার সাদৃশ্য আছে। যেমন হিমের রাতে ওই গগনের দীপ গুলিরে।...... এই গানের
সাথে সামঞ্জস্য আছে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের বসন্ত ঋতু নিয়ে লেখা কবিতার সাথে।
সাহিত্যের
তাৎপর্য বুঝতে গেলে বুঝতে হয় -
গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি
তখন তারে চিনি আমি, তখন তারে জানি।
গানের শেষে রয়েছে:-
রূপের রেখা রসের ধারায় আপন সীমা কোথায় হারায়,
তখন
দেখি আমার সাথে সবার কানাকানি ॥
এখানে বাইরের জগৎ আমাদের মনের
মধ্যে প্রবেশ করে আর একটা জগৎ হয়ে যায়। বাইরের জগতের রূপ, ধ্বনী; আমাদের ভয়,
বিস্ময়, সুখ, দুঃখ এসবের সাথে মিশে, নিয়ে আসে নতুন অনুভূতি। লৌকিক ভাব পরিবর্তিত
হয়ে যায় অ-লৌকিক রসে। এখানে গান শব্দটা গান, সাহিত্য নাটক সমস্ত কিছুর
প্রতিনিধিত্ব করছে। “আমার সাথে সবার কানাকানি” - এই ছত্রের শাস্ত্রীয় প্রতিশব্দ
হলো আত্মিক লোকের সর্ব মানব চিত্তের মহাদেশে। যেখানে সাহিত্যের কান্তাসম্মিত বাণী
ধরা দেয়।
রবীন্দ্রনাথের নাটকের মধ্যে
রক্তকরবীকে অগ্রগণ্য নাটক বলা যেতে পারে। এই নাটকে লেখক যে তত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন
সেটা বুঝতে গেলে আগে জানতে হবে ইকোনোমিক্সের দুটি তত্ত্ব। মার্কেন্টাইল বাদ আর
ফিজিওক্রেট থিওরি।
মার্কেন্টাইল ইকোনমির তত্ত্ব হলো
অন্য দেশ থেকে রিসোর্স শোষণ করে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়া। অষ্টাদশ শতকে ফিজিওক্রেট
ইকোনমির তত্ত্ব প্রকাশ পায়। এই তত্ত্বে মূলত কৃষির মাধ্যমে দেশের সম্পদ বাড়ানোর
কথা বলা হয়। পরে কৃষির সাথে শিল্পও মিশে যায়।
Mercantilism, economic
theory and practice common in
Europe from the 16th to the 18th century that promoted governmental regulation
of a nation's economy for the purpose of augmenting state power at the expense
of rival national powers. It was the economic counterpart of political absolutism.
(Source: Wikipedia)
Physiocracy (from the
Greek for "government of nature") is aneconomic theory developed by a group of 18th century
Enlightenment French economists who believed that the wealth of nations was
derived solely from the value of "land agriculture" or "land
development" and that agricultural products should be highly priced.
(Source: Wikipedia)
১৯২৬ সালে রক্তকরবী নাটক প্রকাশ পায়। প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের পর লেখক অনুভব করলেন সমস্ত বিশ্ব জুড়ে সাম্রাজ্যবাদ ধীরে ধীরে কমে
আসছে। ১৯২৬ সালে কবি যখন রক্তকরবী প্রকাশ
করেন, তখন বিশ্ব ইকোনোমিতে, কৃষি আর শিল্প বিকাশের মধ্যে দিয়ে, ফিজিওক্রেট ইকোনোমি
দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কেন্টাইলবাদ অবসোলিট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশ তখন
মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন বা সশস্ত্র বিপ্লবের পথে হাঁটছে। গ্রাম গঠনের কাজে
কোনো উল্লেখযোগ্য বিকাশ নেই। তাই কবি লিখলেন -
পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আ য় আ য় আয়।
ডালা যে তার
ভরেছে আজ পাকা ফসলে, মরি হায়
হায় হায়॥
১৯৩২ সালে যখন রাউন্ড টেবিল
কনফারেন্স ভারতীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য পেয়েছে, তখন কবি ভেবেছেন আমাদের দেশে বর্ণ
বিদ্বেষ আর জাতিভেদ প্রথার কুফল। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে লেখকের অনেক কবিতা,
নাটক, গানের মূল চেতনা ছিল বর্ণভেদ আর জাতিভেদ। এই সময়ের বিখ্যাত নাটক হলো 1933
সালে লেখা চণ্ডালিকা যা ১৯৩৮ এ নৃত্যনাট্যের রূপ পেয়েছে আর ১৯৩৯ সালে শ্যামা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে
১৯৪১ সালে কবি লিখেছেন 'ওরা কাজ করে'| এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ পরিষ্কার বলেছেন যে
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ পতন হতে চলেছে।
জানি তার পণ্যবাহী সেনা
জ্যোতিষ্কলোকের
পথে রেখামাত্র চিহ্ন রাখিবে না -
রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১ সালে কবিতার
মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যৎ বাণী করে গেছেন যে - সাম্রাজ্যবাদের অবসান আসন্ন। গণতন্ত্র
আস্তে চলেছে।
কবিতা/গানটি হলো -
ওই মহামানব আসে;
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্ত ধূলির ঘাসে ঘাসে।
সুরলোকে বেজে উঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক—
এল মহাজন্মের
লগ্ন।
এখানে মহামানব হলো গণতন্ত্র।
রবীন্দ্রনাথ গণতন্ত্রের পূর্বাভাস মৃত্যুর পূর্বেই দিয়ে গেছিলেন।এখানেই
রবীন্দ্রনাথের সার্থকতা।
-------
[গানের
তাল, রাগ বিষয়ক তথ্যগুলি http://tagoreweb.in ওয়েব সাইট থেকে নেওয়া|]
অনেক ধন্যবাদ। তবে, উপরের দিকে সালটা ১৮৮৫ হবে।
ReplyDeleteঅত্যন্ত গভীর ভাবে বিশ্লেষন করা হয়েছে, খুব ভাল লাগল। আরোও লিখা পেলে ভাল লাগবে । লেখককে বিস্তর সাধুবাদ।
ReplyDelete