Thursday, 18 May 2017

বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্য



উপোদঘাত
আমার জেঠু
আজ এমন একজন মানুষ কে নিয়ে লিখছি যিনি আর আমাদের মধ্যে নেইতিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেনডক্টর তিনকড়ি ভট্টাচার্যআমার জেঠুতাঁকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে জানেন তাদের বাদ দিলে, বাকি সবাই ভাববেন এটা আর এমন কথা কি! অহনি অহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরমমৃত্যু তো সব মানুষেরই আসবে একদিন না একদিনতা নব্বই বছরের দোরগোড়ায় কোনো মানুষ মারা যেতেই পারেনতবু আজ লিখতে বসলুমকারণ এই মানুষ টা মারা যাওয়াতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো সেটা বাংলার মানুষ কোনোদিন জানতেও পারবে নাডক্টর জগদীশ ভট্টাচার্যের ছাত্র আমার জেঠু ডক্টর তিনকড়ি ভট্টাচার্য সেই অর্থে কোনোদিন বুদ্ধিজীবী হিসেবে লাইমলাইট আসেননিতবে বাংলা বা ইংলিশ নিয়ে এম পাশ করার পর যখন কোনো ছাত্র বা ছাত্রী মনে করতো এবার ভাষা তা একটু শেখা দরকার, তারা আসতো জেঠুর কাছেএকথা ঠিক যে জেঠুর কাছে পড়তে গেলে আগে অন্তত অনার্স টা পাস্ করতে হয়তাই আমরাও জেঠুর কাছে গেলে আগে সাবজেক্ট টা ভালো করে পড়ে নিতামআর অন্য ভাবে বললে, মাধ্যমিক পড়তে পড়তে বাংলা অনার্স অনেকটাই রপ্ত করে ফেলেছিলাম। উপমান কর্মধারা আর উপমিত কর্মধারার পার্থক্য কি? নরহরি কী সমাসদ্বন্দ্ব সমাসের নাম দ্বন্দ্ব কেন? ইচ্ছা বোঝাতে সন প্রত্যয় কিভাবে হয়চাউল আর চাউর কথার মিল কোথায়উদ্বেলিত শব্দে কি ভুল রয়েছেবেশি আর বেশী এর পার্থক্য কেনপরিবেশ আর পরিবেষ কথার মিল কোথায়এরম হাজারো প্রশ্ন আর উত্তর, আর চেষ্টা করলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না
পশ্চিমবঙ্গে পন্ডিত মানুষের অভাব নেইবইএর অভাব নেইকিন্ত যে প্রশ্নের উত্তর বই তে খুঁজে পাওয়া শক্ত অথবা যে প্রশ্নের উত্তর গুগল দিতে পারবে না , সেখানে একজন চলমান এনসাইক্লোপেডিয়া আজ অচল হয়ে গেছেকবিতার অভাব নেইকবি অগুনতিশুধু ছন্দ কিভাবে মেলাতে হয় আর সেই ছন্দ কিভাবে ভাঙতে হয় সেই তত্ত্ব বোঝানোর মতো মানুষ হাতে গোনাভাব আর রসের সম্পর্ক কিতাৎপর্য আর মমমট ভট্ট কিভাবে যুক্তব্যঞ্জনা আর কবিতা কিভাবে উৎকৃষ্ট হয়ে ওঠেএই সব প্রশ্ন আর উত্তর কে বলে দেবে, আমার জানা নেইআবার বলবো বই আছে, পন্ডিত আছেউত্তর বলার লোক আছেকিন্ত  তিনকড়ি ভট্টাচার্য  আর নেইতাই অনেক কথাই হারিয়ে গেলো যেটা বইতে খুঁজেও পাওয়া যাবে না
মাধ্যমিকে জেঠু কে প্রশ্ন করেছিলুম, পথের পাঁচালী তে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ অশ্বথ গাছের কথা কেন লিখলেন , এতো গাছ থাকতে অশ্বথ গাছ কেনযে উত্তর পেলুম সেটা কল্পনাতীত জটিলএই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ইমানুয়েল কান্ট আর অপ্রায়োরি তত্ত্বের কথা জানতে হয়বলা বাহুল্য, পলিটিকাল সাইন্স, ফিলোসফি, এডুকেশন, এই সমস্ত সাবজেক্ট মাস্টার্স লেভেল পর্যন্ত অনায়াসে পড়াতেন জেঠুশুধু আর্টস নয়, জেঠু কোয়ালিফিকেশন ছিলেন সাইন্স গ্রাজুয়েটসারাজীবন চাকরি করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং লাইন জেসপ কোম্পানিতেমেটালারজি মুখস্ত বলতেন অনায়াসেআর ইংলিশ তো ছেড়েই দিলুমচেম্বার্স ডিকশনারি ছিল মুখস্থফিজিক্স বোসন তত্ত্বের কথা আমি জেঠুর থেকেই প্রথম বুঝিবাকি যেটা জানি সেটা কিছু হাই অর্ডার ডিফারেনশিয়াল একুয়েশনশেষ বার যখন জেঠুর কাছে বসেছিলাম, উনি আমায় বোঝালেন চৈতন্য চরিতামৃত। কৃষ্ণ কি , ধর্ম কি, চৈতন্যদেব কেন পুরী তে গিয়েছিলেন। চৈতন্য দেব কে খুন করা হয়েছিল - এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য ইত্যাদি। এরম নানা প্রশ্ন উত্তর। আজ এটা লিখতে বসে চোখ দিয়ে জল এসে গেলো। অনেক পুরোনো স্মৃতি মনে পরে গেলো। যদি কোনোদিন ওনার রিসার্চ গুলো সহজ ভাষায় লিখে পাবলিশ করতে পারি, সেটাই হবে ওনাকে আমার দেয়া সেরা ট্রিবিউট। কারণ ওনার লেখা পড়তে গেলেও দশ বার ডিক্সনারি দেখতে হয়।
পৃথিবী গতিশীল। টিভি খুললে বুদ্ধি -জীবী দের অভাব নেই। দুনিয়া এগিয়ে যাবে। আমার জীবন ও এগোবে। শুধু, নববর্ষা প্রেমের কবিতা, প্রকৃতির কবিতা নয়, আর কবিতার নাম কেন নব বর্ষা, সেটা বোঝানোর মতো লোক আর থাকবেনা।

স্বীকারোক্তি

এই বইতে যে বিশ্লেষণ আর টীকা লেখা হয়েছে সেগুলি মূলত আমার বড়জেঠুর রিসার্চ।  উনি কিছু রিসার্চ খাতায় লিখে রেখেছেন।  কিছু মুখে বলেছেন।  ওনার কাছে শুনে আর ওনার খাতা পড়ে আমি ওনার রিসার্চ যেটুকু বুঝেছি, সেখান থেকে আমার এই প্রয়াস।  ওনার বেশ কিছু তত্ত্ব বিশ্ব সাহিত্যে রপ্তানি যোগ্য।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা  প্রয়োগ করেছি। ধর্ম বিষয়ক সমস্ত বিশ্লেষণে চৈতন্যদেবের কথায় আর কৃষ্ণদাস কবিরাজের ভাষায় - সর্বত্র প্রমান দিবে পুরান বচন - যথাসাধ্য প্রয়োগের চেষ্টা হয়েছে।  কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো শ্লোক প্রয়োগ করা যায়নি কারণ বিভিন্ন টীকাকারের টীকা  থেকে সারমর্ম গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।  সাহিত্য বিষয়ক সমালোচনার ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ আর ভাবসম্প্রসারণ সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত মতামত। তথ্যসূত্র মূলত উইকিপেডিয়া, উইকি সংকলন এবং বাংলাপিডিয়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে ইন্টারনেট সাইট থেকে নেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সঞ্চয়িতা, গীতবিতান বা লেখকের মূল রচনাবলী থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এই পুস্তকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা কোনো  ইউনিভার্সিটি স্বীকৃত পেপার পাবলিশ নয়।  তাই এই বিশ্লেষণী চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত এবং পারিপারিক গবেষণার ফসল।  কোনো স্বীকৃত মতবাদ নয়। সংখ্যা লেখার ক্ষেত্রে ভারতীয় অঙ্কের আন্তর্জাতিক রূপ ব্যবহার করা হয়েছে|

 
উৎসর্গ
এই বইটি আমি আমার জেঠু স্বর্গীয় ডক্টর তিনকড়ি ভট্টাচার্য কে উৎসর্গ করলাম। এই বইয়ে যে প্রবন্ধ লেখা হয়েছে তার অধিকাংশ আমার জেঠুর রিসার্চ। আমি তাঁর পুরোনো লেখা থেকে আর তাঁর থেকে শুনে যেটুকু শিখেছি তার ওপর নির্ভর করে এই প্রবন্ধ গুলো লিখেছি। 



No comments:

Post a Comment