সাহিত্যের
সেকাল ও একাল
মোবাইল টেকনোলজি সমাজে রেভোল্যুশন এনেছে দুহাজার
সালের পর থেকে। দুহাজার সালের পর, বিশেষ করে যেদিন থেকে ফেইসবুক এসেছে, সেদিন থেকে
- মানুষের কাছে পৌঁছনোটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। অনেকেই কবিতা লেখে, অনেকেই গল্প লেখে
আবার আমার মতো কেউ কেউ হিজিবিজি লেখে। আগে অনেকেই এই লেখাগুলো বইয়ের পাতায় বন্দী
করে রাখতো। আজ ফেসবুকে ভাষা উম্মুক্ত। নানান রং আর ছবির কোলাজের মাঝে লেখার
প্রেসেন্টেশন। অনেকেই লেখে। সবার লেখা মনে দাগ না কাটলেও কেউ কেউ বেশ ভালোই লেখে।
অনেকেই পড়ে। লাইক, রিমার্ক কতকিছু। অনেকে আবার প্রোফাইল ছবি দেখেও হয়তো লাইক করে
দেয়। ঝা চকচকে প্রেসেন্টেশন। শুধু একটাই প্রশ্ন থাকে লেখাগুলো মনে কতক্ষন স্থায়ী
হয় ? আবার একটা নতুন পোস্ট, নতুন মুড্।
যদি সময়টা একটু পিছিয়ে যাই, মানে দুহাজার সালের আগে, তখন কেমন ছিল সাহিত্য! কিছু সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা। অথবা বই লেখা। প্রেসেন্টেশন মানে বইমেলা। এরই মধ্যে লেখককে পৌঁছতে হবে পাঠকের মনে। আর সেটা না হতে পারলে সব চেষ্টাই মাটি। লেখকের দায়িত্ব পাঠক কে দিয়ে পড়িয়ে নেয়া। মানে বই কিনতে বাধ্য করা। সেটা ভালোলাগার টানে, ভালোবাসার টানে। সেদিন সমাজ আমাদের দিয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টপাধ্যায় এনাদের মতো সাহিত্যিক। যাদের লেখা বার বার পড়েছি। বই কিনে পড়েছি। পূজাবার্ষিকী খুলেই আগে এনাদের লেখা পড়েছি। এমনকি পান্ডব গোয়েন্দা বা কিকিরা এইসব চরিত্র মনে দাগ কেটে গেছে। কবিতার কথা বললে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এনারা আজকের দিনেও প্রাণবন্ত। কি ছিল তাদের লেখাতে ? খুব সহজ কোথায় বললে ওনাদের লেখা মনে দাগ কেটে যেত। একবার পড়তে শুরু করলে আর থামা যেত না। খাবার টেবিলে, রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে, বা টেক্সট বই এর মধ্যে লুকিয়ে। বাবা মার বকুনি, স্যারের মার সব কিছু উপেক্ষা করে পড়েছি। ভুল বললুম। লেখাগুলো পড়িয়ে নিয়েছে। আমরা পড়িনি। আমাদের পড়িয়ে নিয়েছে। বয়সের সাথে সাথে সমাজের পরিবর্তন যেন মনের কোনে উঠে এসেছে, আর মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে গুলো ডানা মেলে উড়ে গেছে। রস নিস্পত্তি। ভাব আর বাইরের জগৎ বিক্রিয়া করে যে রস উৎপন্ন করেছে সেটা মনের সাথে মিশে গেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় দ্রবীভুত হয়।
আর একটু পিছিয়ে যাই রবীন্দ্রনাথের যুগে। ছোটগল্প নিরুপমা। বিষয় পণপ্রথা। এবার বিশ হাজার পন আর হাতে হাতে আদায়। সামান্য একটা লাইন। একশো বছর পরও যার তাৎপর্য প্রাসঙ্গিক। মনের কোনায় যে রস ছড়িয়ে দেয়', সেটা জানায় - বেদনার কি ভাষা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহেশ। আজকেও পড়লে চোখে জল আসে। দেবদাস। একটাই প্রশ্ন জাগায় - ভালোবাসা করে কয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর পদ্মানদীর মাঝি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এনারা কালজয়ী। কারণ একটাই। এনাদের লেখা সমাজের বাস্তবের সাথে মনের যন্ত্রণার সংযোগ ঘঠায়। কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন। লেখা পড়তে হয় না। লেখক পড়িয়ে নেন। একবার নয় বার বার। আর বারবার আসে নব অনুভূতির সজীবত্ব।
যদি সময়টা একটু পিছিয়ে যাই, মানে দুহাজার সালের আগে, তখন কেমন ছিল সাহিত্য! কিছু সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা। অথবা বই লেখা। প্রেসেন্টেশন মানে বইমেলা। এরই মধ্যে লেখককে পৌঁছতে হবে পাঠকের মনে। আর সেটা না হতে পারলে সব চেষ্টাই মাটি। লেখকের দায়িত্ব পাঠক কে দিয়ে পড়িয়ে নেয়া। মানে বই কিনতে বাধ্য করা। সেটা ভালোলাগার টানে, ভালোবাসার টানে। সেদিন সমাজ আমাদের দিয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টপাধ্যায় এনাদের মতো সাহিত্যিক। যাদের লেখা বার বার পড়েছি। বই কিনে পড়েছি। পূজাবার্ষিকী খুলেই আগে এনাদের লেখা পড়েছি। এমনকি পান্ডব গোয়েন্দা বা কিকিরা এইসব চরিত্র মনে দাগ কেটে গেছে। কবিতার কথা বললে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এনারা আজকের দিনেও প্রাণবন্ত। কি ছিল তাদের লেখাতে ? খুব সহজ কোথায় বললে ওনাদের লেখা মনে দাগ কেটে যেত। একবার পড়তে শুরু করলে আর থামা যেত না। খাবার টেবিলে, রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে, বা টেক্সট বই এর মধ্যে লুকিয়ে। বাবা মার বকুনি, স্যারের মার সব কিছু উপেক্ষা করে পড়েছি। ভুল বললুম। লেখাগুলো পড়িয়ে নিয়েছে। আমরা পড়িনি। আমাদের পড়িয়ে নিয়েছে। বয়সের সাথে সাথে সমাজের পরিবর্তন যেন মনের কোনে উঠে এসেছে, আর মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে গুলো ডানা মেলে উড়ে গেছে। রস নিস্পত্তি। ভাব আর বাইরের জগৎ বিক্রিয়া করে যে রস উৎপন্ন করেছে সেটা মনের সাথে মিশে গেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় দ্রবীভুত হয়।
আর একটু পিছিয়ে যাই রবীন্দ্রনাথের যুগে। ছোটগল্প নিরুপমা। বিষয় পণপ্রথা। এবার বিশ হাজার পন আর হাতে হাতে আদায়। সামান্য একটা লাইন। একশো বছর পরও যার তাৎপর্য প্রাসঙ্গিক। মনের কোনায় যে রস ছড়িয়ে দেয়', সেটা জানায় - বেদনার কি ভাষা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহেশ। আজকেও পড়লে চোখে জল আসে। দেবদাস। একটাই প্রশ্ন জাগায় - ভালোবাসা করে কয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর পদ্মানদীর মাঝি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এনারা কালজয়ী। কারণ একটাই। এনাদের লেখা সমাজের বাস্তবের সাথে মনের যন্ত্রণার সংযোগ ঘঠায়। কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন। লেখা পড়তে হয় না। লেখক পড়িয়ে নেন। একবার নয় বার বার। আর বারবার আসে নব অনুভূতির সজীবত্ব।
আজকে ছোট বড়ো সবারই মন
অস্থায়ী। টি ভি তে সিরিয়েল দেখলে দেখা যাবে একজন মহিলা আদা জল খেয়ে পেছনে পড়ে আছে
আর এক মহিলার ক্ষতি করতে, আর অন্যদিকে ছেলে মানেই নারী বিদ্বেষী নাহলে ধর্মপুত্র
যুধিষ্ঠির । আমরাও গোগ্রাসে গিলছি সেই সিরিয়াল। মেয়ের নাতনি হয়ে গেলো তারপরের আবার
নতুন করে বিয়ে করতে মন চাইলো। আমাদের মনের আবেগ গুলো আজ ভীষণ জটিল সমীকরণের মাঝে
সমাধান খুঁজে পায়না। আর তাই ঘুরতে থাকে ঘূর্ণাবর্তে। যিনি লিখছেন তিনি নিজেই
কনফিউসড। নিজের কাছেই পরিষ্কার নন কি ঠিক আর কি ভুল। শুধু কিছু আবেগকে ভাষায়
পরিণতি দেয়া। আজকে লেখক লেখা পড়াতে চান। পড়িয়ে নিতে পারে কি? সমাজের প্রতিফিলন
সাহিত্যে আসে কি? ঘটনার প্রতিফলন আসে। ব্যঞ্জনা জাগে না। লেখা সুন্দর লেখার হাত সুন্দর।
হাতের লেখা সুন্দর। শুধু অভাব রাসায়নিক বিক্রিয়ার। হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিসলেই
কি জল হয়? বাতাসে অক্সিজেন আর নাইট্রোজেন আছে। তবু বিক্রিয়ার জন্য চাই বিদ্যুৎ।
সেই বিদ্যুতের ঝলক কোথায়। শুধু শব্দের গুড়গুড় রব । অনেকে আছে হিউমান সাইকোলজি
হিসেব করে লেখেন। সুন্দর লেখা। শুধু বিভাব আর অনুভাবের সংযোগের অভাব। তাই রস আর
নিস্পত্তি হয় না। লেখা হারিয়ে যায় বইয়ের পাতায় বা থেমে থাকে ফেসবুকের ওয়াল এ।
অন্ধকার আসে শরীরের মিলন হয়। শুধু মুখোমুখি বসার জন্য বনলতা সেন আর নেই।
প্রসঙ্গ
রামায়ণ
রামায়ণের উত্তরাকান্ড। সীতার
অগ্নিপরীক্ষা। সীতার আত্মত্যাগ নাকি নারীত্বের অবমাননা। এই নিয়ে নানা মুনির নানা
মত। কেউ বলেন উত্তরাকান্ড মূল বাল্মীকি রামায়ণের অংশ নয়। কারণ লেখন শৈলী আলাদা।
কেউ বলেন লব কুশ রামের সন্তান নয়। কেউ বলেন রাম আদর্শ রাজধর্ম করেছেন। কেউ আবার
বলেন, রাম সীতাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন।আবার নানা রামায়ণের নানান মত। জনক
নন্দিনী সীতা। জনক মানে পিতা। অর্থাৎ সীতা রামের বোন। তুলসীদাস রামায়ণের শিশু
সংকলনে রয়েছে যে সীতা লঙ্কাতেই যাননি। রাবন যাকে নিয়ে গেছিলো সে সীতার রেপ্লিকা।
আসল সীতা অগ্নিদেবের কাছে রক্ষিত ছিল। আমার কথা হলো রামায়ণ লিখেছেন বাল্মীকি। তাই
বাল্মীকি যা লিখেছেন তার বাইরে কিছু কল্পনা করার কি প্রয়োজন। বাল্মীকি তো লক্ষ্মণ
রেখার কোথাও লেখেননি।
রামায়ণ কোন ভাষায় লেখা হয়?
সেটা যে ভাষায় হোক, সংস্কৃত বা সমগোত্রীয় কিছু, ভাষাটা বৈদিক যুগের ভাষা।রাবণ
ছিলেন ব্রাহ্মণ। রামচন্দ্র ক্ষত্রিয়। রামরাজত্বে শূদ্র বেদ পাঠ করেছিল। অর্থাৎ
বাল্মীকি রামায়ণ বৈদিক যুগের আলোকে লেখা। বাল্মীকি আশ্রমে সীতা আশ্রয় নেয় আর লব
কুশ কে প্রসব করে। অর্থাৎ রামায়ণ অনুযায়ী রাম আর বাল্মীকি সমসাময়িক। রামায়ণের সময়
কাল তাহলে খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ৯০০ র মধ্যে। বিদেশী ঐতিহাসিকরাও রামায়ণের সময়
কাল ওই বৈদিক যুগে স্থির করেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো - এডামস
ব্রীজ। যেটা রামেশ্বরম থেকে মান্নান দ্বীপ পর্যন্ত যুক্ত। লাইমস্টোন নির্মিত।
এডামস ব্রীজ কে বানিয়েছেন আর কখন বানিয়েছেন? যদি এই ব্রীজ রামচন্দ্র বানান, তাহলে
কোন সময় বানিয়েছেন? বৈদিক যুগে আর কোনো জায়ান্ট কনস্ট্রাকশন কেন নেই? খ্রিস্টপূর্ব
৪০০ বা ৫০০ অব্দে যখন বুদ্ধদেব বা মহাবীর বৌদ্ধ বা জৈন ধর্ম প্রচার করছেন সেখানে
এডামস ব্রীজ নিয়ে কোনো উল্লেখ কেন পাওয়া যায় না।
এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আগে দেখা যাক এডামস ব্রীজ কখন বানানো হয়েছিল। সেটা নিয়েও নানা মত। তবে জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মতে এই ব্রীজ খ্রিস্ট পূর্ব ৭০০০ থেকে ১২০০০ এর মধ্যে বানানো হয়। অর্থাৎ রামচন্দ্র যদি বানর বাহিনী নিয়ে এই সেতু বানায় তাহলে রামচন্দ্র আর বাল্মীকি সমসাময়িক নন।অর্থাৎ উত্তরাকান্ড, সীতার অগ্নিপরীক্ষা আর রামের রাবন বধ কোনোটাই একসময়ের নয়। তাহলে সীতার অগ্নিপরীক্ষা থেকে রামচন্দ্রকে আলাদা করা যেতে পারে। অন্য ভাবে বললে, মূল রামায়ণে যে ঘটনা আছে সেটার সাথে উত্তরাকান্ডের কোনো যোগসূত্র নেই। বাল্মীকি মুনি রামচন্দ্রের লঙ্কা বিজয়কে বৈদিক আলোকে লিখেছেন। মূল ঘটনা প্রায় ৭০০০ থেকে ৮০০০ বছর আগের।
এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আগে দেখা যাক এডামস ব্রীজ কখন বানানো হয়েছিল। সেটা নিয়েও নানা মত। তবে জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মতে এই ব্রীজ খ্রিস্ট পূর্ব ৭০০০ থেকে ১২০০০ এর মধ্যে বানানো হয়। অর্থাৎ রামচন্দ্র যদি বানর বাহিনী নিয়ে এই সেতু বানায় তাহলে রামচন্দ্র আর বাল্মীকি সমসাময়িক নন।অর্থাৎ উত্তরাকান্ড, সীতার অগ্নিপরীক্ষা আর রামের রাবন বধ কোনোটাই একসময়ের নয়। তাহলে সীতার অগ্নিপরীক্ষা থেকে রামচন্দ্রকে আলাদা করা যেতে পারে। অন্য ভাবে বললে, মূল রামায়ণে যে ঘটনা আছে সেটার সাথে উত্তরাকান্ডের কোনো যোগসূত্র নেই। বাল্মীকি মুনি রামচন্দ্রের লঙ্কা বিজয়কে বৈদিক আলোকে লিখেছেন। মূল ঘটনা প্রায় ৭০০০ থেকে ৮০০০ বছর আগের।
বিজ্ঞান থেকে সরে এসে যদি
জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে চর্চা করা যায় তাহলে রামচন্দ্রের জন্ম সময় হিসেবে যে গ্রহ
নক্ষত্র হিসেব পাওয়া যায় সেটা খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ বছর আগের। অর্থাৎ ভারতে যখন এডামস
সেতু তৈরী হচ্ছে তখন মিশরে পিরামিড তৈরী হচ্ছে। সবই জায়েন্ট কনস্ট্রাকশন। চীনের
প্রাচীর, সেটাও ওই এক গোত্রের সুবিশাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং।
তাহলে বাল্মীকি রামায়ণ বৈদিক যুগের আলোকে লেখা কোনো সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক কাব্য। রামায়ণ অনুসারে যেটুকু ইতিহাস ফুটে ওঠে সেটা হলো - রামচন্দ্র উত্তর ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। মর্যাদা পুরুষোত্তম। দক্ষিণ ভারতে যারা থাকতেন, প্রবল পরাক্রমী আর বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যা তে প্রবল উন্নত। সেখানে সবথেকে শক্তিশালী রাজা বালী। আর সবথেকে পন্ডিত ও বীর হনুমান। রামচন্দ্র বালীকে আড়াল থেকে হত্যা করেন। সম্মুখ সমরে নয়। আর সেই যুগের ম্যানেজমেন্ট গুরু হলো জাম্বুবান। শ্রীলংকাতে প্রবল পরাক্রমী রাজা ছিলেন রাবন। তিনি মহা পন্ডিত ও ছিলেন। রাবন সমস্ত উত্তর ভারত জয় করেছিলেন কিন্তু দক্ষিণ ভারতে বালীকে হারাতে পারেননি। তাই দুজনে সন্ধি করেছিলেন। রামচন্দ্র রাবনের সাথে যুদ্ধ করে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করেন। আর সেই যুগেও ঘর শত্রুর অভাব ছিলোনা। যেমন বিভীষণ। সময়ের বিবর্তনে সেই ইতিহাস মুছে গেছে। মহর্ষি বাল্মীকি সেই ইতিহাস উদ্ধার করে মহাকাব্যের রূপ দিয়ে লিখে গেছেন। সীতার ভূমিকা রহস্যাবৃত। কারণ সীতা অযোনিসম্ভূতা। জনক রাজা সীতাকে চাষ করতে গিয়ে পেয়েছিলেন। তাই সীতার ইতিহাস বৈদিক যুগেই সীমাবদ্ধ থাকে।
তাহলে বাল্মীকি রামায়ণ বৈদিক যুগের আলোকে লেখা কোনো সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক কাব্য। রামায়ণ অনুসারে যেটুকু ইতিহাস ফুটে ওঠে সেটা হলো - রামচন্দ্র উত্তর ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। মর্যাদা পুরুষোত্তম। দক্ষিণ ভারতে যারা থাকতেন, প্রবল পরাক্রমী আর বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যা তে প্রবল উন্নত। সেখানে সবথেকে শক্তিশালী রাজা বালী। আর সবথেকে পন্ডিত ও বীর হনুমান। রামচন্দ্র বালীকে আড়াল থেকে হত্যা করেন। সম্মুখ সমরে নয়। আর সেই যুগের ম্যানেজমেন্ট গুরু হলো জাম্বুবান। শ্রীলংকাতে প্রবল পরাক্রমী রাজা ছিলেন রাবন। তিনি মহা পন্ডিত ও ছিলেন। রাবন সমস্ত উত্তর ভারত জয় করেছিলেন কিন্তু দক্ষিণ ভারতে বালীকে হারাতে পারেননি। তাই দুজনে সন্ধি করেছিলেন। রামচন্দ্র রাবনের সাথে যুদ্ধ করে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করেন। আর সেই যুগেও ঘর শত্রুর অভাব ছিলোনা। যেমন বিভীষণ। সময়ের বিবর্তনে সেই ইতিহাস মুছে গেছে। মহর্ষি বাল্মীকি সেই ইতিহাস উদ্ধার করে মহাকাব্যের রূপ দিয়ে লিখে গেছেন। সীতার ভূমিকা রহস্যাবৃত। কারণ সীতা অযোনিসম্ভূতা। জনক রাজা সীতাকে চাষ করতে গিয়ে পেয়েছিলেন। তাই সীতার ইতিহাস বৈদিক যুগেই সীমাবদ্ধ থাকে।
আমার চোখে
সত্যান্বেষী।
সত্যান্বেষী শব্দটা একজন
মানুষের কপিরাইট বলা যেতে পারে। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়। বাঙালি ডিটেকটিভ ব্যোমকেশের
অমর স্রষ্টা। ছোটবেলায় ব্যোমকেশের কিছু গল্প পড়েছি। কিন্তু ব্যোমকেশ সমগ্র অর্থাত
সবকটা গল্প পড়া হয়নি। ব্যোমকেশ পড়তে গিয়ে সমস্যা হলো একবার পড়তে শুরু করলে আর থামা
যায় না। তা সে রাত যতই হোক বা দিনে যত কাজই থাক। ব্যোমকেশ পড়তে পড়তে কিছু কথা
মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল সেটা থেকেই ইচ্ছে হলো আবার লিখতে।
সুকুমার সেন বলেছেন হোমস আর ব্যোমকেশের মধ্যে ওই অনুপ্রাসের ঝংকার টুকু ছাড়া মিল সামান্যই। চরিত্রগত অমিল বাদ দিলে গল্পের প্লট দিয়ে বিচার করলে কিন্তু কিছু কিছু মিল পাওয়া যায়। দেশলাই বাক্সের মধ্যে রাখা একটা দেশলাই কাঠির ধোয়া নিয়ে আসতে পারে নিশ্চিত মৃত্যু। সেই দেশলাই কাঠি দিয়ে একবার ব্যোমকেশকেও মারার চেষ্টা হয়। অপরাধী ধরতে ব্যোমকেশকেও অভিনয় করতে হয় মৃত ব্যক্তির। এ যেন কোনান ডয়েল এর প্লট। শার্লক হোমস অভিনয় করেন অসুস্থতার। ওয়াটসন কেও দেখতে দেননি পাছে ধরা পরে যান। অথবা পাতায় থাকা কেমিকাল আগুনে জ্বালাতেই আসে মৃত্যুর হাতছানি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন ওয়াটসন আর শার্লক হোমস।
সুকুমার সেন বলেছেন হোমস আর ব্যোমকেশের মধ্যে ওই অনুপ্রাসের ঝংকার টুকু ছাড়া মিল সামান্যই। চরিত্রগত অমিল বাদ দিলে গল্পের প্লট দিয়ে বিচার করলে কিন্তু কিছু কিছু মিল পাওয়া যায়। দেশলাই বাক্সের মধ্যে রাখা একটা দেশলাই কাঠির ধোয়া নিয়ে আসতে পারে নিশ্চিত মৃত্যু। সেই দেশলাই কাঠি দিয়ে একবার ব্যোমকেশকেও মারার চেষ্টা হয়। অপরাধী ধরতে ব্যোমকেশকেও অভিনয় করতে হয় মৃত ব্যক্তির। এ যেন কোনান ডয়েল এর প্লট। শার্লক হোমস অভিনয় করেন অসুস্থতার। ওয়াটসন কেও দেখতে দেননি পাছে ধরা পরে যান। অথবা পাতায় থাকা কেমিকাল আগুনে জ্বালাতেই আসে মৃত্যুর হাতছানি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন ওয়াটসন আর শার্লক হোমস।
তবু যদি কোনো বাঙালিকে কোনান ডয়েলের পাশে বসাতে হয় তিনি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাউন্টেন পেন না সাপের ছোবল। পেনের কালিতে সাপের বিষ। গল্পের বই কিন্তু টাকার পাতা। রনপা চড়ে ভূত। আঁকা ছবিতে প্রণয়ীর নীল চোখ। আর সেখান থেকে রহস্য উন্মোচন। এর কোনো তুলনা হয়না। শরীরে কথাও আঘাতের চিন্হ নেই। শুধু নাকের হাড় ভাঙ্গা। গল্পের ছলে একটি মেয়ের মায়ের নাম থেকে বুঝে গেলেন অপরাধী কে। পারালিসিস পা। কিন্তু চলতে সক্ষম।আধুনিক মেডিকেল সাইন্স। কোমরে ইনজেকশন করে সাময়িক অসাড়তা। পেয়াজের রস থেকে ইনভিসিবল কালি দিয়ে চিঠি তে উইল লেখা। এই সমস্ত প্লট আমার মনে হয়েছে কোনো বিদেশী লেখকের থেকে কোনো অংশে কম নয়। ব্যোমকেশকে সর্দার বল্লভভাই পটেল ডেকে পাঠিয়েছিলেন গুপ্তচর ধরতে। হয়ত কাল্পনিক প্লট। তবু গর্ব হয় বাঙালি হিসেবে।
আমি আগাথা ক্রিস্টি বেশী পড়িনি। চরিত্রের এত কঠিন নাম যে ভুলে যাই সেই চরিত্র কোথায় ছিল। এটা আমার মেমরি তে RAM এর প্রবলেম। ব্যোমকেশের গল্পে সেই সমস্যা নেই। কিন্তু ব্যোমকেশ পড়তে গিয়ে কিছু সমাজ চিন্তার উদয় হলো সেটা না লিখে পারছিনা। দুর্গ রহস্য তে বলা আছে সিপাহী বিদ্রোহের সময় সিপাহীরা লুটপাট করেছে বিহার অঞ্চলে। ইংরেজ আর বিদ্রোহী সিপাহী সবাই। জানিনা এমনটা তো ইতিহাসে পড়িনি। কিন্তু লেখন যখন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তখন একটু গবেষণা করে তো দেখতে হবে। শৈল্য রহস্য গল্পে 9 তারিখ সকালে কলকাতা থেকে পোস্ট করা চিঠি পুনা থেকে বাহাত্তর মাইল দুরে মহাবালেশ্বরে 12 তারিখের মধ্যে কিভাবে পৌছল আর 12 তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে ব্যোমকেশ প্লেন করে কিভাবে কলকাতা পৌছে গেল এটা আমার মাথায় ঢোকেনি। যে মানুষ ডাক বাক্সের মধ্যে চুরি যাওয়া জিনিস লুকিয়ে রাখার মত প্লট ভাবতে পারেন তিনি একদম দিনক্ষণ দিয়ে পোস্টাল সিস্টেমকে এতবড় সার্টিফিকেট কি করে দিলেন সেটাও ভাবতে হবে। সজারুর কাঁটা গল্পে সজারুর কাঁটা কেন ইউস করা হলো পরিষ্কার হয় নি। তবু শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়। তিনি শ্রেষ্ঠ। হেমেন্দ্র কুমার রায়ের জয়ন্ত কিছুটা কাছাকাছি গেলেও একমাত্র ব্যোমকেশই পারে ঘাড়ের পেছনে ছুচ ফুটিয়ে খুন করার রহস্য সমাধান করতে আর তারপর সত্যবতীর সাথে প্রেম করতে। শুধু সেই সময়ের কিছু সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা গল্পে পড়তে গিয়ে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার আর অবিচারের কথায় হিন্দু হয়ে চোখে জল এসেছিল।
বাংলায় গোয়েন্দা গল্পের জনক বলাহয় পাঁচকড়ি দে কে (সুকুমার সেনের
মতে)। তাঁর আগে কিছু রহস্য কাহিনী লেখা
হলেও সেটা ঠিক গোয়েন্দা গল্প নয়। কিশোর সাহিত্যে ফেলুদা আর পান্ডব গোয়েন্দা বেশ
সুন্দর। সত্যজিৎ রায় শব্দ নিয়ে জাগলারি করলেও গল্পগুলো সিনেমার মতো মনে দাগ কাটেনি। এটা ব্যাক্তিগত মতামত| বাংলায় আর এক গোয়েন্দা
হলেন কিরীটি রায়। প্রথম আত্মপ্রকাশ
কালোভ্রমর গল্পে। লেখক নীহার রঞ্জন
গুপ্তের কথায় প্রথম গল্প বলে অনেক ভুল ভ্রান্তি থেকে গেছে গল্পে। তবু গোয়েন্দা উপন্যাসটি উপভোগ্য। হিন্দি সিনেমার মতো পরপর অ্যাকশন
সিকোয়েন্স। বর্ণনার ছটা সুন্দর। তবে মগজাস্ত্রের শান কম। প্রসঙ্গত সিনেমার জগতে আলোকপাত করা যেতে পারে।
পরিচালক সত্যজিৎ রায়। একদিকে ফেলুদা
অন্যদিকে ব্যোমকেশ। ফেলুদা সত্যজিৎ রায়ের
নিজের সৃষ্টি। ব্যোমকেশ হলো শরদিন্দু
বাবুর ব্রেন-চাইল্ড। সিনেমার নাম সোনার কেল্লা যেখানে ফেলুদা ডিটেক্টিভ আর অন্য
দিকে চিড়িয়াখানা যেখানে ব্যোমকেশ। ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
ব্যোমকেশের চরিত্রে স্বয়ং উত্তমকুমার। ১৯৭৪ সালে সোনার কেল্লা আর চিড়িযাখা ১৯৬৭
সাল। মূল উপন্যাসের সাথে যদি তুলনা করা
যায় তবে বিশ্লেষণটা প্রাঞ্জল হয়। সোনার কেল্লা একটা কিশোর সাহিত্য। যেটা সত্যজিত রায়ের নিদর্শন কুশলতায় সমস্ত
বয়সের দর্শকের কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
শিশু থেকে বয়স্ক সবাই দেখে বার বার। উপন্যাস হিসেবে চিড়িয়াখানা নিজেই স্বয়ং
সম্পূর্ণ। চিড়িয়াখানা পড়লেই আনন্দ হয়।
সিনেমা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার
প্রাপ্ত হলেও গল্পের বাঁধুনি সিনেমার উত্তেজনা কে সুন্দর ভাবে ধরে রেখেছে। সেই
হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত হলো সোনার কেল্লা অনেক বেশি পরিণত সিনেমা।